বন্ধ্যত্ব দূরীকরণের নামে বিক্রি হচ্ছে অনুমোদনবিহীন ওষুধ

Physiologist
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বাসিন্দা আবুল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করেছেন মধ্যপ্রাচ্যে। প্রবাস থেকে ফিরে নিয়মিত সাংসারিক জীবনে সন্তানের প্রত্যাশা করছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। তবে সন্তান না হওয়ায় ওই দম্পতি শেষমেশ যান বন্ধ্যত্ব দূরীকরণবিষয়ক এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে। ওই চিকিৎসকের পরামর্শে ছয় মাস তিনি ও তার স্ত্রী ফারটিলম্যান ট্যাবলেট খেয়েছেন (প্রতিটি ট্যাবলেটের মূল্য প্রায় ৯২ টাকা)। কিন্তু এতে কোনো ফল না হওয়ায় তারা আরেক চিকিৎসকের কাছে যান। ওই চিকিৎসক তাদের ফারটিল-এম ট্যাবলেট গ্রহণের পরামর্শপত্র দেন। এগুলোও ছয় মাস ধরে সেবন করে কোনো ফল না হওয়ায় সন্তানের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন তারা। রাজধানীর মডার্ন হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শিশির কুমার একই কারণে দিপিকা (৪০) নামে এক নারীকে ফারটিসাল নামক ট্যাবলেট সেবনে ব্যবস্থাপত্র দেন। দিপিকার স্বামী ১২ ফেব্রুয়ারি মিটফোর্ড হাসপাতালসংলগ্ন ওষুধের দোকানে সেটি কিনতে যান। দোকানি এ সময় প্রতিবেদককে ব্যবস্থাপত্রটি দেখান, যেখানে ফারটিসাল ট্যাবলেট লেখা ছিল। প্রতিদিন তিনটি করে ট্যাবলেট খাওয়ার নির্দেশনা ছিল ওই ব্যবস্থাপত্রে। শুধু আবুল হোসেন আর দিপিকাই নন। তাদের মতো অসংখ্য মানুষ এভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বন্ধ্যত্ব বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। দাম্পত্য জীবনে সন্তান-সন্ততি না আসায় বিবাহিত নারী-পুরুষ উভয়েই উদ্বিগ্ন থাকেন। বন্ধ্যত্ব দূর করার নামে একশ্রেণীর অসাধু চিকিৎসক ও ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের কোনো দেশেই বন্ধ্যত্ব দূরীকরণের তেমন ওষুধ নেই। তাছাড়া ওষুধ সেবনে সন্তান হবে এ ধারণাও ঠিক নয়। তবে সন্তান ধারণের জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে স্বল্পমূল্যে বন্ধ্যত্ব দূরীকরণে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এ চিকিৎসা ব্যয়বহুল হলেও অনেকে তা গ্রহণ করছেন। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, বন্ধ্যত্ব দূরীকরণে ওষুধ সেবন একটি ভ্রান্ত ধারণা। একশ্রেণীর প্রতারক এ নিয়ে মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। আর বাজারে যেসব অনুমোদনহীন ওষুধ রয়েছে, তা অবৈজ্ঞানিক। এসব ওষুধের ভেতরে চকপাউডার, আটা-ময়দা ও সুজি ছাড়া কিছুই থাকে না। যারা এসব ওষুধ বিক্রি করছেন, তাদের পুলিশে সোপর্দ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ফারটিলকেয়ার, ফারটিলম্যান, ফারটিলওম্যান, ফারটিলসাল, ফারটিল-এম, ফারটিল-এফ ও স্পামকেয়ার নামে বন্ধ্যত্ব দূরীকরণের অনুমোদনহীন ওষুধ। অত্যন্ত চড়া দামে এগুলো বিক্রি হচ্ছে। মিটফোর্ড এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি ৩০টি ফারটিলকেয়ার ট্যাবলেট ১ হাজার ২৯৫ টাকা, ৬০টি ফারটিলম্যান ও ফারটিলওম্যান ট্যাবলেট ৫ হাজার ৫০০, ৩০টি ফারটিলসাল ৩ হাজার ২০০, ৩০টি স্পার্মকেয়ার ট্যাবলেট ১ হাজার ৩৫০, ৬০টি ফারটিল-এম ও ফারটিল-এফ ৪ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিটফোর্ডের মেসার্স সাফিন ড্রাগ হাউজের স্বত্বাধিকারী সাফিন আহমেদ বলেন, বাজারে বন্ধ্যত্ব দূরীকরণের নামে নানা ওষুধের সরবরাহ রয়েছে। ভারত ও চীন থেকে এসব ওষুধ আনা হচ্ছে। তবে এ ওষুধ সেবন করে প্রকৃত কোনো উপকার পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) রুহুল আমিন বলেন, বাজারে আমদানিকৃত কোনো ওষুধ বিক্রি হলে ওই ওষুধের গায়ে ড্রাগ রেজিস্ট্রেশন বা ডিআর নম্বর, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের নাম ও ওষুধের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য অবশ্যই লেখা থাকবে। এসব তথ্য না থাকলে তা অনুমোদনবিহীন বলে গণ্য হবে। অনুমোদনবিহীন ওষুধ বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। সূত্র: বণিকবার্তা