হাত বা পা ভাঙলে তাৎক্ষনিক কি করবেন?

পড়ে গিয়ে বা অন্য কোনোভাবে আঘাতে হাড় ভেঙে যেতে পারে। সাধারণত আমরা ব্যথা পেলে স্থির থাকি না। অন্যজন গিয়েই টানাটানি শুরু করি; হাড় জোড়া লাগাতে চাই। এটি কিন্তু খুবই মারাত্মক ভুল। হাড় ভেঙে গিয়ে যতটা ক্ষতি হয়, এর চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় এই টানাটানিতে। কারণ, ভাঙা হাড় নড়াচড়া করলে ভাঙা অংশ আশপাশের মাংসপেশী, রক্তনালীকে ছিড়ে ফেলতে পারে। এতে হাড় ভাঙ্গা পরবর্তী অংশ রক্তশূন্যতার কারণে পঁচেও যেতে পারে। কোনো কারণে হাড়ে ব্যথা পাওয়ার পর যদি সেটি অনেক ফুলে যায়, নড়াচড়া করলে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়, তাহলে হাড় ভাঙার আশঙ্কা থাকে। যদিও শুধু এ লক্ষণ দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় না। এজন্য দরকার এক্সরে। এক্সরে করলে নিশ্চিত হওয়া যাবে হাড় ভেঙেছে কি না।

অনেকে আলসেমি করে চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না বা হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে যান। এর পরিণাম কিন্তু ভয়াবহ হয়। দ্রুত চিকিৎসা করালে যত তাড়াতাড়ি হাড় জোড়া লাগার সম্ভাবনা থাকে, দেরি করলে সেটি ক্ষীণ হয়ে যায়। এমনকি হাড় ঠিক জায়গায় জোড়া না লেগে বেঁকে জোড়া লাগতে পারে বা জোড়া নাও লাগতে পারে। অনেকে হাড় ভেঙে গেলে বাঁশের চাটাই দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেন। এতে হাতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে হাত পঁচে যেতে পারে। অনেকে আবার গোবর বা গাছের ছাল বাকলের প্রলেপ দেয়। এতেও হাতে পচন ধরতে পারে। আসলে হাড় ভাঙলে নড়াচড়া একেবারেই করা যাবে না। রোগীকে ভাঙা স্থানের দুই পাশে কাঠ দিয়ে বেঁধে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।

জরুরী চিকিৎসা বা করণীয়:-

১. জোড়াকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে

২. বরফের টুকরা টাওয়ালে বা ফ্রিজের ঠান্ডা পানি প্লাস্টিকের ব্যাগে নিয়ে লাগালে ব্যথা ও ফুলা কমে আসবে। প্রতি ঘন্টায় ১০ মিনিট বা দুই ঘন্টা পর পর ২০ মিনিট অনবরত লাগাতে হবে। তবে এটা সহ্যের মধ্যে রাখতে হবে। এই পদ্ধতি আঘাতের ৪৮-৭২ ঘন্টা পর্যন্ত চলবে।

৩. জোড়ায় ইলাসটো কমপ্রেসণ বা স্প্লিন্ট ব্যবহারে ফুলা ও ব্যথা কমে আসে।

৪. জোড়ার নিচে বালিশ দিয়ে উঁচু করে রাখলে ফুলা কম হবে।

৫. কোমরে সাপোর্ট বা কোরসেট ব্যবহর করতে হবে।

৬. এনালজেসিক বা ব্যথানাশক ও দরকার হলে এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন।

৭. হাড় ভাঙ্গলে বা জোড়া স্থানচ্যুতি হলে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে।

প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রাথমিক চিকিৎসায় রোগীর ব্যথা ও ফুলা সেরে উঠার পর, জোড়ার বিভিন্ন শারিরীক পরীক্ষার মাধ্যমে কি কি লিগামেন্ট, পেশী বা মেনিসকাস ইনজুরি হয়েছে এবং এর তীব্রতা নির্ণয় করতে হবে। কখনও কখনও এক্স-রে ও এম.আর.আই. এর সাহায্য নিতে হয়। লিগামেন্ট, মেনিসকাস, জোড়ার আবরণ, পেশী ইনজুরি ও জোড়া বার বারছুটে যায় চিকিত্সা প্রদান করতে সক্ষম এমন আর্থ্রোস্কোপিক চিকিত্সকের কাছে বা সেন্টারে রোগীকে পাঠাতে হবে। প্রাথমিক বা শল্য চিকিত্সার পর নিয়মিত ও উপযুক্ত পরিচর্যা করে জোড়ার স্বাভাবিক অবস্থা দ্রুত ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

 

সূত্র: ইন্টারনেট