পুঁড়ে গেলে তাৎক্ষনিক কি করবেন?

পুড়ে যাওয়া ব্যাপার অনেকটাই দুর্ঘটনাবশত। শীতকালে আমরা প্রায়ই এ ধরনের পুড়ে যাওয়ার ঘটনা শুনে থাকি। প্রচণ্ড শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে আগুনের আঁচ নিতে, কাপড়ে আগুন লেগে অথবা দুর্ঘটনাবশত কুপি উল্টে গিয়ে শরীর বা শরীরের অংশবিশেষ পুড়ে যেতে পারে।
আগুন দেখলে বিচলিত বা আতঙ্কগ্রস্ত হবেন না। ধীর-স্থির থাকুন। প্রথমে আগুনের উৎপত্তি কোথায়, সত্যিই আগুন লেগেছে কি-না জানার চেষ্টা করুন। তেল জাতীয় আগুনে কম্বল, কাঁথা, ছালা বা মোটা কাপড় ভিজিয়ে চাপা দিন। বৈদ্যুতিক আগুনে দ্রুত প্রধান সুইচ বন্ধ করুন। পরনের কাপড়ে আগুন লাগলে মাটিতে গড়াগড়ি দিন, ভুলেও দৌড়াবেন না। আগুন লাগা নিশ্চিত হলে পর্যায়ক্রমে ধীরে-সুস্থে নেমে আসুন। আগুন ঊর্ধ্বমুখী। তাই উপর তলায় আগুন লাগলে প্রথমে সেই তলার লোকজনকে বেরিয়ে আসার সুযোগ দিন। উপরের তলার পর নিচের দিকের তলার লোকজনকে বেরিয়ে আসার সুযোগ দিন।
শরীরের উপরিভাগের স্তর হচ্ছে ত্বক। আগুনে ত্বক পুড়ে গেলে চামড়া লাল হয়ে যায়, সামান্য ফুলে যায় এবং জ্বালা করে। এ অবস্থাকে বলে প্রথম ডিগ্রি বার্ন।
প্রথম ডিগ্রি বার্ন : এ ক্ষেত্রে পোড়ার স্থানে শুধু ১৫ থেকে ২০ মিনিট পানি ঢাললেই চলবে। খুব বেশি জ্বললে একটি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেতে পারেন।
দুই ডিগ্রি বার্ন : এ অবস্থায় ত্বকের উপরিভাগের প্রথম স্তর (এপিডার্মিস) সম্পূর্ণভাবে এবং পরবর্তী স্তর (ডার্মিস) আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুড়ে যাওয়া স্থান লাল হয়ে যায়, ফুলে যায়, ফোসকা পড়ে এবং প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
সাধারণত গরম পানি বা গরম তরল কিছু পড়লে, কাপড়ে আগুন লেগে গেলে, মোমের গরম তরল অংশ সরাসরি চামড়ায় লাগলে, আগুনে উত্তপ্ত কড়াই জাতীয় কিছুর স্পর্শে এ ধরনের বার্ন হয়। এ ক্ষেত্রে পানি ঢালতে হবে এক-দুই ঘণ্টা পর্যন্ত। ফোসকা গলানোর চেষ্টা করবেন না। প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
তিন ডিগ্রি বার্ন : এ অবস্থায় ত্বকের উপরিভাগের দুটি স্তরই (এপিডার্মিস ও ডার্মিস) সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চামড়ার নিচে থাকা মাংসপেশি, রক্তনালি, স্নায়ু ইত্যাদিও আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত স্থান কালো হয়ে যায়, চামড়া পুড়ে শক্ত হয়ে যায়, স্পর্শ করলেও ব্যথা অনুভূত হয় না। সরাসরি আগুনে পুড়লে, বিদ্যুতায়িত হলে, ফুটন্ত পানি বা তরল সরাসরি শরীরে পড়লে বা বিস্ফোরণে এ ধরনের বার্ন হয়। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব আগুন বা গরম জায়গা থেকে সরিয়ে নিন। পুড়ে যাওয়া কাপড় খুুলে দিতে হবে। অযথা ডিম, টুথপেস্ট ইত্যাদি লাগাবেন না। এতে কোনো উপকার নেই। আক্রান্ত ব্যক্তিকে এমনভাবে শুইয়ে দিতে হবে, যাতে তার পুড়ে যাওয়া অংশ খোলা দিকে থাকে। ঠাণ্ডা পানি পোড়া জায়গায় ঢালতে হবে যতক্ষণ না রোগীর জ্বালা-যন্ত্রণা কমে। 
আক্রান্ত স্থানটি ফুলে যাওয়ার আগে সেখান থেকে ঘড়ি, বেল্ট, আঙটি, কাপড় ইত্যাদি যদি থাকে খুলে ফেলতে হবে। পুড়ে যাওয়া অংশের কাপড় যদি লেগে থাকে তবে সেটা না টেনে বাকি কাপড় কেটে সরিয়ে ফেলতে হবে। পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত ব্যান্ডেজ বা কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থান হালকা করে বেঁধে দিতে হবে। যদি মুখে কোথাও পুড়ে যায় তবে মুখ ঢাকার প্রয়োজন নেই। 
পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত কাপড় দিয়ে এমনভাবে মাস্ক তৈরি করতে হবে যাতে নাক, মুখ ও চোখ বের করে মুখ ঢাকা যায়। সিলভার সালফাডায়জিন ক্রিম হাতের কাছে থাকলে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে লাগিয়ে দিন। আক্রান্ত অংশ পরিষ্কার কাপড় বা গজ-ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে একটু উঁচু করে ধরে রাখুন। আক্রান্ত ব্যক্তির জ্ঞান থাকলে পানিতে একটু লবণ মিশিয়ে স্যালাইন বা শরবত করে খেতে দিন অথবা ডাবের বা খাওয়ার পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করতে দিন। প্রাথমিক চিকিৎসা চালানো অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিন। মনে রাখবেন, অসাবধানতাই অগি্নকাণ্ডের প্রধান কারণ। আর অগ্নি নির্বাপণের চেয়ে প্রতিরোধ করাই উত্তম।

ডা. কামরুল আক্তার সনজু
আবাসিক সার্জন
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল