জরুরী প্রয়োজনে তাৎক্ষনিক করনীয়

প্রাথমিক চিকিৎসা বা ফার্স্ট এইড (ইংরেজি: First aid) নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির শারীরিক অক্ষমতা, ক্ষতিগ্রস্ততা বা আঘাতপ্রাপ্তির প্রেক্ষাপটে সাধারণ জ্ঞানের উপর নির্ভর করে অস্থায়ী চিকিৎসাবিশেষ। দূর্ঘটনাজনিত কোন কারণে আরো গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ততা ও সঙ্কটাপন্ন হবার হাত থেকে রোগীকে বাঁচাতে প্রাথমিক চিকিৎসা অত্যন্ত ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর ফলে ভূক্তভোগী ব্যক্তিকে অস্থায়ীভিত্তিতে নিরাপত্তা প্রদান করে উন্নত চিকিৎসার জন্যে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ফলশ্রুতিতে ডাক্তার বা নার্স প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও সহযোগিতা করে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন কিংবা অন্য কোন বিশেষায়িত হাসপাতালে দ্রুত প্রেরণের সঠিক নির্দেশনা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন।

প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের জন্যে তেমন কোন যন্ত্রপাতি বা চিকিৎসা উপকরণের প্রয়োজন পড়ে না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে যে-কোন স্থানে ও সময়ে দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। জরুরী চিকিৎসা কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসার উপর আগ্রহী ব্যক্তিদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। এর ফলে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী ব্যক্তি নির্দিষ্ট স্থানে তথ্য প্রেরণ করেন ও অ্যাম্বুলেন্স আসার পূর্ব পর্যন্ত রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

 

আসুন জেনে নেই জরুরী অবস্থায় আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে কি করবো -

 

কাটাছেঁড়া

অল্প ও অগভীর কাটাছেঁড়ার প্রাথমিক চিকিত্সা ঘরে বসেই করা সম্ভব। রক্ত বের হলে প্রথম কাটা জায়গাটি পরিষ্কার কাপড়ের টুকরো দিয়ে চেপে ধরে রাখুন কয়েক মিনিট। রক্তপাত কিছুটা কমে এলে তুলায় অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ লাগিয়ে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করুন। এরপর ব্যান্ডেজ দিয়ে হালকাভাবে বেঁধে রাখুন। খেয়াল রাখুন, ক্রমাগত রক্তপাত হতে থাকলে অথবা ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে যেতে হবে।

 

পুড়ে গেলে

ঘরোয়া দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা ত্বক পুড়ে যাওয়া। গরম পানির ভাপ, যেকোনো ধরনের গরম তরল অথবা সরাসরি আগুনের স্পর্শে ত্বক পুড়ে যেতে পারে। ত্বক পুড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত স্থান কল ছেড়ে তার নিচে রাখুন অন্তত ১০ মিনিট। সেই সঙ্গে রোগীকে এক প্যাকেট ওরস্যালাইন গুলে খেতে দিন। কারণ পুড়ে গেলে শরীরে পানির স্বল্পতা দেখা দেয়। এরপর পোড়া স্থান শুকনো কাপড় দিয়ে হালকাভাবে মুছে এর পরিমাণ ও গুরুত্ব বুঝে প্রাথমিক চিকিত্সা দিতে হবে। অল্প ক্ষত হলে কিংবা হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হলেও প্রাথমিক চিকিত্সা হিসেবে ক্ষতস্থানে পুরু করে পোড়ার মলম লাগিয়ে দিন। হাতের কাছে মলম না থাকলে ডিমের সাদা অংশ অথবা মধুও লাগাতে পারেন। মধু ও ডিমের সাদা অংশে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক থাকে।

 

পোকা কামড়ালে

ক্ষতস্থানটি যত দ্রুত সম্ভব সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্যথার স্থানে বরফ সেঁক দিন। পোড়ার মলমও লাগাতে পারেন। মলম না থাকলে কাঁচা হলুদের রস বা হলুদ গুঁড়া গুলে লাগাতে পারেন। হলুদেও প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক উপাদান রয়েছে। এক জায়গায় বেশি কামড় দিয়েছে কি না, সেদিকে খেয়াল করুন। ক্ষত বেশি হলে, শ্বাস নিতে কষ্ট হলে কিংবা জিহ্বা ও গলা ফুলে উঠলে চিকিত্সকের কাছে যেতে হবে।

 

ডায়াবেটিক রোগী হঠাত্ অজ্ঞান হলে

ডায়াবেটিস হলে রোগীকে শর্করা খুব মেপে খেতে বলা হয়। এ ক্ষেত্রে কখনো কখনো রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি কমে গেলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি মাত্রায় কমে গেলে রোগীর মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়ে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। এমন অবস্থায় ঘাবড়ে না গিয়ে রোগীকে চিনি বা চিনিজাতীয় খাবার যেমন—চিনি বা গুড়ের শরবত, চকোলেট খাওয়াতে হবে। তরল খাওয়ানো সম্ভব না হলে খানিকটা চিনির দানা রোগীর মুখে দিয়ে দিন। এতে কয়েক মিনিটের মধ্যে রোগীর জ্ঞান ফিরে আসবে। যদি জ্ঞান না ফেরে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে।

 

সাপে কামড়ালে

আমাদের দেশের বিষধর সাপের প্রজাতি ও সংখ্যা খুব কম। সাধারণত সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৯৫ শতাংশ সাপই বিষধর নয়। এসব সাপের কামড়ে রোগীর কোনো ক্ষতি হয় না। বিষধর সাপের কামড়ের লক্ষণ হলো, রোগীর শরীর অবশ হয়ে আসবে কিংবা হাত-পা নাড়াতে পারবে না। এবং ক্ষতস্থান থেকে অনবরত রক্ত ঝরতে থাকবে। যেকোনো সাপে কাটলে প্রথমে শুকনো লম্বাটে কোনো কাপড় দিয়ে আক্রান্ত স্থানের খানিকটা ওপরে হালকাভাবে বাঁধতে হবে। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় দড়ি বা রশি দিয়ে এত শক্ত করে বাঁধা হয় যে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে হাত-পায়ের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়ে যায়। অথচ এখানে সাপের বিষের কোনো প্রভাব থাকে না। তাই সাপে কামড়ালে কাপড়ের টুকরো দিয়ে এমনভাবে বাঁধতে হবে, যেন বাঁধনের ভেতর দিয়ে দুটি আঙুল ঢোকানো যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগী আতঙ্কিত বা ভয় পেয়ে যায়। একগ্লাস গ্লুকোজ, শরবত বা খাবার স্যালাইন গুলে খাওয়ানো যেতে পারে। এরপর রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে।

ফার্স্ট এইড বক্স

যেকোনো দুর্ঘটনায় তাত্ক্ষণিক প্রাথমিক চিকিত্সার জন্য বাড়িতে একটি ফার্স্ট এইড বক্স থাকা খুব জরুরি। ফার্স্ট এইড বাক্সে প্রাথমিক চিকিত্সার উপকরণ গুছিয়ে রাখা হয়। বাজারে ফার্স্ট এইড বক্স কিনতে পাওয়া যায়। আবার চাইলে আলাদা করে বিভিন্ন উপকরণ কিনে নিজেই বানিয়ে নিতে পারেন ফার্স্ট এইড বক্স। যেকোনো সময় প্রয়োজনে হাতের কাছেই পাওয়া যায় এমন জায়গায় ফার্স্ট এইড বক্স রাখুন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, সব ধরনের ওষুধ ও চিকিত্সা সরঞ্জাম শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে। ফার্স্ট এইড বক্সের সরঞ্জামের একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো।

♦    অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ (স্যাভলন, ডেটল, পোভিডন আয়োডিন দ্রবণ ইত্যাদি)

♦    অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম।

♦    তুলা, গজ, কাঁচি।

♦    ব্যান্ডেজ (ছোট ব্যান্ডেজের স্ট্রিপ)।

♦    মাইক্রোপোর (সাদা রঙের স্কচটেপের মতো টেপ। ব্যান্ডেজ আটকানোর জন্য)।

♦    বিভিন্ন আকারের পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত সুতি কাপড়ের টুকরো।

♦    কয়েক প্যাকেট খাওয়ার স্যালাইন।

♦    চিনি বা গ্লুকোজের প্যাকেট।

♦    প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ।

♦   থার্মোমিটার।

♦    ক্রেপ ব্যান্ডেজ।